আয়মান আশরাফের গালে চড়ের দাগ
বগুড়ায় মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারে (ওটি) খাতনা করার সময় ব্যথায় নড়াচড়া ও কান্নাকাটি করায় আয়মান আশরাফ (৫) নামে নার্সারি শ্রেণির এক শিশুকে চড়-থাপ্পড় ও নখের আঁচড়ে জখম করেছেন চিকিৎসক। ওই চিকিৎসকের নাম নজরুল ইসলাম ফারুক। শিশুটির পরিবার জানিয়েছে, গত শনিবার (১ জুন) সকালে এ ঘটনার পর থেকে শিশুটি আতঙ্কে রয়েছে। পরিবারের বাইরের কোনও মানুষ দেখলে ভয়ে আঁতকে উঠছে। রাতে ঘুমাতে পারছে না।
ওই হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের রেজিস্ট্রার অভিযুক্ত নজরুল ইসলাম ফারুকের মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় এ বিষয়ে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। হাসপাতালের আরএমও (আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা) ডা. শফিক আমিন জানান, ঘটনাটি খুবই অন্যায় ও দুঃখজনক। শিশুর স্বজনদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করা হয়েছে। ওই চিকিৎসককে ডেকে সাবধানও করে দেওয়া হয়েছে।
শিশুটির পরিবার সূত্রে জানা গেছে, “ব্র্যাক ব্যাংকের ঢাকা প্রধান কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক আশরাফুল ইসলাম মুরাদের শ্বশুরবাড়ি বগুড়া শহরের মালতিনগর এলাকায়। তার স্ত্রীর নাম মাসুমা রহমান মিশু। তাদের সন্তান আয়মান ঢাকার মাইলস্টন স্কুল ও কলেজের নার্সারির ছাত্র। ঈদের ছুটিতে বগুড়ায় গিয়ে আয়মানকে খতনা করার উদ্যোগ নেন তারা। মিশু কয়েকদিন আগে তার আত্মীয় (খালা) সিনিয়র স্টাফ নার্স শাহানা পারভিন বকুলের মাধ্যমে আয়মানকে ওই হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের রেজিস্ট্রার নজরুল ইসলাম ফারুককে দেখান। ওই চিকিৎসক শনিবার (১ জুন) সকালে খতনা করার সময় দেন। ওইদিন বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আয়মানকে অপারেশন থিয়েটারে নেওয়া হয়। সেখানে অপরাজিতা নামে ঢাকার ইব্রাহিম মেডিক্যাল কলেজের এক ছাত্রী, নার্স বকুল ও অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। লোকাল অ্যানেসথেসিয়া দেওয়ার পর ডা. ফারুক অপারেশন শুরু করেন। কিন্তু ঠিকমতো অবশ না হওয়ায় আয়মান নড়াচড়া ও কান্নাকাটি শুরু করে। এ সময় ডা. ফারুক ক্ষিপ্ত হয়ে শিশুটির গালে ছয় থেকে সাতটি চড়-থাপ্পড় ও উরুতে নখের আঁচড় দেন। এ সময় সেখানে থাকা নার্সরা অনুরোধ করেও ওই চিকিৎসককে শান্ত করতে পারেননি। তিনি নার্স ও অন্যদের ওটি থেকে বের হয়ে যেতে বলেন। পরে আবারও লোকাল অ্যানেসথেসিয়া দেওয়ার পর খতনা করানো হয়। শিশু আয়মান অপারেশন থিয়েটার থেকে বের হওয়ার পর বাবা-মাকে জানায়, ‘আর কখনও ওই ডাক্তারের কাছে যাবো না, ডাক্তার মারে’।”
রবিবার দুপুরে ঘটনাটি ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার পর অনেকের মাঝে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। শিশুটির বাবা আশরাফুল ইসলাম মুরাদ অভিযোগ করেন, ‘ঠিকমতো অবশ না হওয়ায় নড়াচড়া ও কান্নাকাটি করলে ডা. ফারুক তার গালে ছয় থেকে সাতটি চড় দিয়েছেন। এছাড়া উরুতে নখের আঁচড় দিয়ে মাংস তুলে ফেলেন।’ তার বিশ্বাস, ওই চিকিৎসক মানসিকভাবে অসুস্থ। তিনি আরও জানান, আয়মানকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার পর রাতে সে ঘুমাতে পারেনি। নতুন কাউকে দেখলে আঁতকে উঠছে, ভয় পাচ্ছে। তিনি ওই চিকিৎসকের বিচার চেয়ে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. এটিএম নুরুজ্জামান ও আরএমও ডা. শফিক আমিন কাজলের কাছে অভিযোগ করেছেন। এ ব্যাপারে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া না হলে তিনি ওই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেবেন। শিশুটির মা মাসুমা রহমান মিশুও ওই চিকিৎসকের শাস্তি দাবি করেছেন।
মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স ও শিশুটির নানি (মায়ের খালা) শাহানা পারভিন বকুল এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
অভিযুক্ত চিকিৎসক নজরুল ইসলাম ফারুকের মোবাইল ফোন বন্ধ ও হাসপাতালে না থাকায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। হাসপাতালের আরএমও ডা. শফিক আমিন কাজল বলেন, ‘এ ঘটনায় আমরা খুবই বিব্রত। আমি ও তত্ত্বাবধায়ক তাকে ডেকে সাবধান এবং শিশুর পরিবারের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছি।’
Leave a Reply